সিলেট বিডি ভিউ: মানুষ চিরকালই নিজের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতে সিদ্ধহস্ত। নিজের ভুলকে সহজ করে দেখা, নিজের সীমাবদ্ধতাকে অজুহাত দিয়ে ঢেকে রাখা, আর অপরের তুচ্ছ ত্রুটিকে বড় করে দেখা—এই মনোভাবটি আমাদের আত্মিক ও সামাজিক সংকীর্ণতার পরিচয়। আমরা নিজেরা কোনো একটি কাজ করলে মনে করি, "সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছি।" অথচ সেই একই কাজ যদি অন্য কেউ করে, তখন সেটাই আমাদের চোখে হয়ে ওঠে দোষ, দুর্বলতা কিংবা দুর্নীতি।
এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমাদের পারিবারিক, পেশাগত এমনকি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জগতেও এই একচোখা বিচার প্রবলভাবে বিরাজমান।
❖ কর্তৃত্বের সুবিধাভোগী মনোভাব
একজন শিক্ষক দেরিতে ক্লাসে এলে বলেন, “অফিসের কাজ ছিল।” কিন্তু ছাত্র দেরি করলে তিনি বলেন, “শৃঙ্খলার অভাব।”
একজন নেতা নিজের ভুল সিদ্ধান্তকে “নীতিগত স্বাধীনতা” বলে চালিয়ে দেন, কিন্তু সমালোচক যদি প্রশ্ন তোলে, তখন তিনি হন “চক্রান্তকারী”।
একজন পিতা সন্তানকে বকাঝকা করলে তা হয় “শাসনের অংশ”, কিন্তু সন্তান যদি কিছু বলতে চায়, তখন সেটা “উদ্ধততা”।
❖ সুবিধামতো নীতি ব্যাখ্যা
আমরা যখন কাউকে উপেক্ষা করি, তখন বলি “মন-মেজাজ ভালো ছিল না”। কিন্তু কেউ আমাদের এড়িয়ে গেলে, বলি “অহংকারী!”
নিজের দোষ মুছে ফেলতে ব্যস্ত, অন্যের ভুল রঙে রঙে সাজিয়ে তুলি।
এই মনোভাবের ফলাফল কী?—সম্পর্কে দূরত্ব, সমাজে হিংসা, মানুষের মধ্যে অহং ও সংকীর্ণতা।
❖ এই প্রবণতার শিকড় কোথায়?
আমরা মনে করি, আমি ‘ভালো মানুষ’, সুতরাং যা করি—তা ভালো। অথচ এই মানসিকতা নিজেকে সত্যিকারের ভালো মানুষ হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। আসলে, প্রতিটি মানুষের ভেতরেই রয়েছে একটি ‘নিজেকে ছলনার মাধ্যমে বড় প্রমাণের চেষ্টা’। এই প্রবণতাই মানুষকে দ্বিচারী করে তোলে।
❖ সমাধান কোথায়?
প্রথম ধাপ হচ্ছে আত্মসমালোচনার চর্চা।
আমার চোখ দিয়ে যখন অন্যকে দেখি, তখন সেই একই চোখ দিয়ে একবার নিজেকেও দেখা উচিত।
১. আমি যে কাজটি করলে ‘স্মার্ট’, সেটা অন্যে করলে ‘বেয়াদবি’ কেন?
২. আমি ভুল করলে ‘মানবিক দুর্বলতা’, অন্যে ভুল করলে ‘চরিত্রহীনতা’ কেন?
৩. আমি যে কাজটি করলে 'কুরো কুরো', অন্যে করলে মাকরূহ কেন?
৪. আমি যে কাজটি করলে 'হালাল', অন্যে করলে হারাম কেন?
আত্ম-পর্যালোচনা আর অহং ভাঙার সাধনা যদি শুরু না করি, তবে সমাজে শুধু মুখোশ পরা মানুষে ভরে যাবে—মুখে নীতির বুলি, ভেতরে সুবিধাবাদ।
❖ শেষকথা
‘নিজে করলে সুখ, অন্যে করলে দোষ’—এই মনোভাবই সমাজে অবিচার, হতাশা, ভণ্ডামি আর দূরত্বের কারণ। আমরা যদি চাই, সমাজে ন্যায় ও সৌহার্দ ফিরে আসুক, তাহলে আগে নিজেকে আয়নায় দেখতে হবে।
আর আয়না কখনো মিথ্যা বলে না।
নিজেকে ভালোবাসো, কিন্তু অন্যকেও ভালোবাসার জায়গা দাও। নিজের ভুল ক্ষমা করো, কিন্তু অন্যের ভুলেও দয়া রাখো।
তবেই মানুষ হবে মানুষ। সমাজ হবে সুন্দর।
Editor and Publisher: Foysol Ahmed Malik,
Office: Osmaninagar, Sylhet bangladesh. Email: sylhetbdview@gmail.com,
Mobile: WhatsApp: 01711338911
www.sylhetbdview.com