সিলেট বিডি ভিউ: আমরা প্রতিনিয়ত অনেকের মৃত্যুসংবাদ শুনি। অনেকের জানাযা পড়ি। অনেককে কবরে রাখি। আমরা কি ভাবি? অন্যের মতো একদিন আমারও মৃত্যুসংবাদ প্রচারিত হবে। অন্যদের মতো একদিন আমারো জানাযা হবে। অন্যদের মতো একদিন আমাকেও কবরে রাখা হবে। কিন্তু আমি জানি না কারা আমার জানাযা পড়বে। আমি জানি না কোথায় আমার কবর হবে। আমি জানি না কখন আমার মৃত্যু হবে? আমি শুধু নিশ্চিত জানি আমাকে একদিন এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। এ পৃথিবীতে কেউই বলতে পারবে না যে তার কখনও মৃত্যু হবে না। মৃত্যু সকলের জন্যে অবধারিত। এমনকি যে আজরাইল মানুষের জান কবজ করে তারও একদিন মৃত্যু হবে। মৃত্যুর হাত থেকে কেউই রেহাই পাবে না। মৃত্যু থেকে পালানোরও কোন পথ নেই। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই, এমনকি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গে অবস্থান করলেও।’ (সূরা নিসাঃ আয়াত ৭৮)
আজকে হাসপাতালে আমার সমবয়সী একটা ছেলেকে মারা যেতে দেখলাম। আমি চিন্তা করলাম আজকে ওর জায়গায় যদি আমার মৃত্যু হতো তাহলে আমার কি হতো? আমি খুব ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লাম। এখনও আমার খুব ভয় হচ্ছে মৃত্যুর কষ্টটা না জানি কি ভয়ংকর হতে পারে!!
আমরা যখন কোন বয়ো-বৃদ্ধ মানুষকে মারা যেতে দেখি, তখন দেখি মৃত্যুপথযাত্রীর এক পা আরেক পা এর সাথে লতা-গুল্মের মতো লেগে যায়। শ্বাস-কষ্ট বৃদ্ধি পায় এবং জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। আর নাক-মুখ ডান দিক থেকে বাম দিকে আর বাম দিক থেকে ডান দিকে ঘুরায়। চোখ উপরের দিকে স্থির হয়ে যায়। এরপর শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। আস্তে আস্তে সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। এভাবে একজন জীবন্ত মানুষ নিমিষেই মরা লাশে পরিণত হয়ে যায়।
আজকে আমরা ঘরে একা একা থাকতে ভয় পাই। কিন্তু মৃত্যুর পরে কবরে আমাদের একাই থাকতে হবে। আজকে আমরা বাবা-মা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন মিলে থাকি। মরণের পর কেউই আমাদের সাথে থাকবে না। কবরে একা একা কিভাবে থাকব এটা চিন্তা করলে গা শিউরে উঠে। মানুষ সৃষ্টির সূচনাতে জান্নাতে আদম (আ) এর সাথে শয়তানের প্ররোচনার যে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে এ কারণেই যে মানুষ যাতে মনে করে তাদের প্রথম আবাস ছিল জান্নাত। দুনিয়া তাদের আসল ঠিকানা নয়। পৃথিবীতে আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করার জন্যই পাঠিয়েছেন। যারা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে তারাই স্থায়ী আবাস জান্নাতে পুনরায় যেতে পারবে।
আমরা দেখি যে দুনিয়াতেও পরীক্ষার মাধ্যমে একজন ছাত্রের মেধার মূল্যায়ন করা হয়, পড়ালেখার মূল্যায়ন করা হয়। আমরা আমাদের যেকোন একাডেমিক পরীক্ষার আগে খুব বেশি পড়াশুনা করে ভালোভাবে পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করি। কিন্তু মৃত্যুর পরও আমাদের যে জীবনের শ্রেষ্ঠ পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে আমরা কি সে পরীক্ষার জন্য কখনও কোন প্রস্তুতি নিয়েছি? আমরা কি কখনও আমাদের মৃত্যুর কথা চিন্তা করি?
দুনিয়ার কোন পরীক্ষায় কোন ছাত্র ভালো করলে দেখা যায় যে বাবা-মা, শিক্ষক, আত্মীয়-স্বজন খুব খুশি হয়, চারদিকে তার অনেক প্রশংসা করা হয়। কিন্তু যে খারাপ করে সে কারো সাথে কথা বলতে-দেখা করতেও চায় না। সে নিজেকে সবচেয়ে বেশি অপমানিত মনে করে। তেমনিভাবে দুনিয়ার জীবনও হলো আখিরাতের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য। যারা এই সময়গুলো আল্লাহর বিধি নিষেধ মেনে চলবে তারা আখিরাতের পরীক্ষায় সফলতা লাভ করবে। আখিরাতের প্রতিটি ধাপে হাসি-খুশি থাকবে। আর যারা দুনিয়ার জীবনে নাফরমানি করবে তারা অকৃতকার্য ও অপমানিত হবে। তাদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে।
দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে সেতুবন্ধন হচ্ছে মৃত্যু। আমরা যদি প্রতিদিন আমাদের মৃত্যুর কথা চিন্তা করি তাহলে আমাদের পক্ষে কোন খারাপ কাজ সংঘটিত করা সম্ভব না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নাফরমানি করাও সম্ভব না। আমাদের বোধের উদয় হোক। এ প্রত্যাশায়…
আপনার মতামত লিখুন :