সিলেট বিডি ভিউ: বিশ বছরের বেশি লেখালেখি ও পেশাদার সাংবাদিকতাই আমার আয়ের বড় উৎস। দেশে সতের বছর আগে মনুবার্তা, আমাদের সময়, বাংলা নিউজ। পরে লন্ডনে আজ থেকে অন্তত বারো বছর আগে চ্যানেল আই ইউরোপ ও সাপ্তাহিক বাংলাটাইমসে বার্তা সম্পাদক হিসেবে চার দিন কাজ করে সপ্তাহে সাড়ে চারশ পাউন্ড বেতন দিতেন ফয়সল ভাই ও তাজ ভাই।
একযুগ আগে ব্রিটিশ পাসপোর্টের জন্য ইলিজেবল হলেও এখনো বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট-দেশটাকে ভালবেসে ব্রিটিশ পাসপোর্টটা নেইনি বলে আপনজনদের জানা জানেন,প্রায়ই সেটাকে নিছক আবেগ জনিত বলে দ্রুত সিদ্বান্ত বদলাতে বলেন। অবশ্য ব্রিটেনে আমার উত্তরসুরী হিসেবে যে এখনো দেশ থেকে খবর লিখে পত্রিকা থেকে নিয়মিত বেতন পায়,অনুজ সাইদুলও এখনো ব্রিটিশ পাসপোর্ট নেন নি।
পত্রিকা, বাংলাদেশে বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউনে নিউজ পাঠানোর সারাদিনের ব্যস্ততায় নিজের মৌলিক কিছু লেখবার সময় মেলে না। এখন টিউলিপ সিদ্দিক বলছেন তিনি আক্রান্ত। গত আওয়ামীলীগ আমলে টিউলিপকে নিয়ে আমার লেখা নির্মোহ সংবাদ বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশের অপরাধে আওয়ামীলীগের কুকুর বাহিনী সিপিগ্যাংদের দ্বারা ধারাবাহিকভাবে অনলাইনে আমাকে ব্যক্তিগত হামলার শিকার হতে হয়েছে। আমার পরিবার,আব্বার মৃত্যুর পর আমার একমাত্র অভিভাবক আমার নানা মরহুম মন্ত্রী এবাদুর রহমান রহমান চৌধুরীর নাম জড়িয়েও আক্রমন করা হয়েছে।
আওয়ামীলীগের এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে মৌলভীবাজারে আমার কেনা জায়গার রাস্তা বন্ধ করে দেয়াল তোলা হয়েছে। তবু ক্ষমতায় উন্মত্ত সেই আওয়ামীলীগের কাছে এক মুহুর্তের জন্য হাতজোর দুরের কথা নুন্যতম সমঝোতা করিনি। একলা লড়াই করে গেছি। জানি,মৃত্যু পর্যন্ত এ লড়াইটা করে যেতে হবে। সামনে বিএনপি বা অন্য কেউ ক্ষমতায় এলেও পরিস্থিতি রাতারাতি বদলে যাবে সে প্রত্যাশা কখনো রাখি না।
জীবনটা ছোট হলেও সামনে অনেক লড়াই বাকী। সে লড়াই ব্যক্তিগত নয়,অনেক মানুষের জন্য।
পেশার কথা বলি। বিশ বছরে বিএনপি আওয়ামীলীগ জামায়াত ডান বা বাম; দেশে বা লন্ডনে কোন দলের না হতে পারা আমার গর্বের ধন। আমৃত্যু কোন দল নেতার মানুষ নয়, ঈমানদার একজন সাংবাদিক হিসেবে শেষ দিন পর্যন্ত বেচে থাকতে চাই। সাংবাদিকের কোন দল নেতা থাকে না। নৈতিক সাংবাদিক মাত্রই বন্ধুহীন। শৈশবের-কৈশোরের এবং পেশাদার সাংবাদিকতা শুরুর প্রথম দিককার অনটনের দিনগুলির সহকর্মীরা ছাড়া পেশাদার সাংবাদিকের বন্ধু থাকে কম। অবশ্য সৎ মানুষ মাত্রই সংঘ হীন। আমিও সংঘহীন,তবে সঙ্গীহীন নই।
সাংবাদিকতা পেশা সতের বছর বয়সে আমাকে অল্প নাম-পরিচয়,ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি হবার সুযোগ দিয়েছিল। অল্প বয়সে তৈরী হওয়া জনপ্রত্যাশার ঋণ সাংবাদিকতার মাধ্যমে পরিশোধের চেষ্টা করে চলেছি।
দুই.
বাংলায় সাংবাদিকতার নামে অন্যের তৈরী স্ক্রিপ্ট রিডিং পড়া,ভিডিও বানিয়ে গালাগালি-দলাদলি আর দালালির দিনগুলির শেষ সময় চলছে এখন।
৩৮ বছরে পৌঁছা জীবনের বাকী সময়টা সাংবাদিকতা করেই কাটাতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু,বিশ্বজুড়েই পেশাদার সাংবাদিকতা করে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ খুব সংকীর্ন হয়ে আসছে। বাংলায় সেটা বন্ধ হবার পথে।
লন্ডনের মতোন শহরে কোন বেনিফিট ছাড়া নুন্যতম মানবিক জীবন যাপন করার জন্য জীবন করার জন্য হালাল পথে আমার ২৫০০ পাউন্ড লাগে। সেই সাথে পত্রিকার বছর শেষে বেতন বোনাসের ক্রমাগত পকেট থেকে জোগান দিয়ে যাওয়া জীবনটা ক্লান্ত করে। বউ,মা,সন্তান কারো না; সেই লড়াইটা একলা আমার।
লন্ডনের মতোন শহরে ১৪ বছর থাকলেও বাংলাভাষী সমাজ সংসারে আমার বাস। বলা লেখা পড়া সব আমার বাংলা। এখনো বাংলাদেশের-মৌলভীবাজারের মাটির ঘ্রান লেগে আছে শরীরের হৃদয় জুড়ে। ব্রিটেনে বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্নাসসহ গ্রাজুয়েশন থাকলেও মাতৃভাষার বাইরে গিয়ে বাংলা থেকে ইংরজি ভাষায় নিজেকে শিফট করা কষ্টের। সাংবাদিকতা আমার কাছে শিল্পের সাধনা,জীবনে ইবাদতের পর দ্বিতীয় প্রার্থনা। প্রার্থনা বা শিল্পের সাধনা এ আই বা প্রযুক্তি দিয়ে হয় না। কোনদিন হবে না।
কিন্তু, সাংবাদিকতা থাকবে। ইংরেজি ভাষায়,বিশ্ব সাংবাদিকতার মুল ধারায় অল্প কিছু মানুষ অন্তত আরো দশ বছর জীবিকা খুঁজে নেবে। মৃত্যুর আগপর্যন্ত হালাল সাংবাদিকতায় জীবিকার যে যুদ্ধটা করে যেতে চাই।
পৃথিবীতে যে তার পছন্দের,প্রিয় কাজটি শেষ পর্যন্ত জীবিকার করে করে যাবার চেষ্টা যেতে পারে সেই সবচেয়ে তৃপ্ত মানুষ। সেই তৃপ্ত হৃদয়ে,আত্বা বিক্রি না করে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত বেচে থাকতে এই যে একজন ক্ষুদ্র মানুষের এই যে স্রোতের বিপরীতে টিকে থাকার সংগ্রাম;সেই জীবনটাকে কিভাবে জানি ভালবেসেছিলাম।
গত ২২ মাস ধরে সাংবাদিকতায় সৃষ্টির আনন্দ ভালবাসার মমত্বে গড়া প্রতিষ্টান Daily Dazzling Dawn.
এ আই মানুষের মস্তিস্ককে পড়ে নেবার,প্রতিটি প্রশ্নের একটি উত্তর খুঁজে দেবার একটি জায়গায় আজকে পৌঁছে গেছে। আর্টিফিশাল ইন্টেলিজেন্স বা মানুষের তৈরী প্রযুক্তি ঠিক করে দিচ্ছে,সিদ্বান্ত দিচ্ছে কোন টা করনীয় আর কোনটা বর্জনীয় এখন পৃথিবীর অনেক মানুষকে। ঠিক করে দিচ্ছে নীতি আর দুর্নীতির সংজ্ঞা।
সেই জায়গায় ব্রিটেনে বা বাংলাদেশে কোন দলের পক্ষের বা মতের নন,নিজের যুক্তিসৃষ্ট ও ন্যায়সঙ্গত মত সমাজকে নিজের অ-কৃত্রিম-মৌলিক ভাবনা দিয়ে আলোকিত করতে পারবেন,এমন সংখ্যালঘু মানুষরা বিলুপ্ত হয়ে গেলে সেই দায় ভোগ করতে হয় সময় ও সমাজকে। সমাজ ও রাষ্ট্রের ইস্যুগুলোতে বিভক্তি ও বিদ্বেষের বাইরে বৃহত্তর ঐক্যের কথা লিখতে-বলতে পারা দল-অর্থ বা সুবিধার দাস নন, জার্নালিজমের নামে একটিভিজম না করা এবং সমাজে মানুষের সন্মান ও শ্রদ্ধার জায়গা ধরে রাখতে পারা সংবাদকর্মীর প্রবল শুন্যতা সমাজজুড়ে।
লেখক:
মুনজের আহমদ চৌধুরী,সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ইউকে বাংলা প্রেসক্লাব।যুক্তরাজ্যে কর্মরত সাংবাদিক
Editor and Publisher: Foysol Ahmed Malik,
Office: Osmaninagar, Sylhet bangladesh. Email: sylhetbdview@gmail.com,
Mobile: WhatsApp: 01711338911
www.sylhetbdview.com